চীনে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট: কত টাকা, কখন লাগবে? একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

চীনে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির সময় ছাত্রছাত্রীরা যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং নামের বানান ও তথ্যের অমিল সংক্রান্ত সমস্যা।
আজকের গাইডে আমরা একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট–সংক্রান্ত সবকিছু পরিষ্কার করবো: কাদের জন্য এটি আবশ্যক, কত টাকা থাকতে হয়, কোন অ্যাকাউন্ট দেখাতে হয়, এবং ভুল করলে কী হতে পারে।

🧾 ১. JW201 এবং JW202 ফর্ম: ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে কি না, সেটা এখান থেকেই নির্ধারিত হয়

চীনে ছয় মাসের বেশি মেয়াদের যেকোনো কোর্সে ভর্তি হলে X1 স্টুডেন্ট ভিসা লাগে। এই ভিসার জন্য আবেদন করার আগে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে একটি JW ফর্ম প্রদান করে, যা চীনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত। এই ফর্ম দুটি ধরণের হতে পারে:
1. JW201 ফর্ম: চীনা সরকারের CSC স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য।
2. JW202 ফর্ম: যেসব শিক্ষার্থী স্ব-অর্থায়নে (self-funded) পড়াশোনা করবে, বা আংশিক স্কলারশিপ পাবে, তাদের জন্য।
👉 যদি আপনার JW201 থাকে, এবং স্কলারশিপে সব খরচ কাভার হয় (টিউশন, আবাসন, স্টাইপেন্ড), তাহলে সাধারণত ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হয় না।
👉 তবে JW202 থাকলে, অর্থাৎ যদি আংশিক স্কলারশিপ থাকে বা নিজের খরচে পড়াশোনা করেন, তাহলে অবশ্যই ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।

❓ ২. JW202 থাকলেও যদি পূর্ণ স্কলারশিপ থাকে, তাহলে কি ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে?

যদি আপনি JW202 ফর্মের অধীনে ভর্তি হন কিন্তু আপনার স্কলারশিপ পূর্ণ ফ্রি হয় (টিউশন, আবাসন ও মাসিক স্টাইপেন্ড সব কিছুই কভার করে), তাহলে সাধারণত ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে না।
অনেক সময় CSC ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় নিজে পূর্ণ স্কলারশিপ দিতে পারে, তাও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।

💰 ৩. কত টাকা ব্যাংক স্টেটমেন্টে থাকতে হবে?

চীনের নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য কমপক্ষে 350000 –400000 টাকা (প্রায় ২,৫০০–৩,০০০ মার্কিন ডলার) ব্যাংকে থাকতে হয়।
তবে এটা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের ওপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে। মূল কথা হলো, আপনার স্টেটমেন্ট দেখে যেন বোঝা যায় আপনি পুরো কোর্সের খরচ মেটাতে সক্ষম।

📄 ৪. ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট কি বাধ্যতামূলক?

সরাসরি বাধ্যতামূলক না হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হয়।
এটি একটি অফিসিয়াল চিঠি যেখানে ব্যাংক উল্লেখ করে, আপনি আর্থিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম। এটি ব্যাংকের স্ট্যাম্প ও অফিসারের স্বাক্ষরসহ প্রস্তুত করতে হয় এবং স্টেটমেন্টের সঙ্গে জমা দিলে বিশ্বস্ততা বাড়ে।

📆 ৫. কয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হয়?

সাধারণভাবে সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়।
স্টেটমেন্টে নিয়মিত লেনদেন থাকা ভালো এবং প্রতিটি পাতায় ব্যাংকের সিল ও ম্যানেজারের স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক।
আপনার অ্যাকাউন্ট যদি নতুন হয় (৩ মাসের কম), তবুও জমা দিতে পারেন—যদি পর্যাপ্ত ব্যালেন্স ও নিয়মিত লেনদেন থাকে।

👤 ৬. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কার হতে পারে?

আপনার নিজস্ব অ্যাকাউন্ট হতে পারে
আপনার পিতা, মাতা বা প্রথম শ্রেণির আত্মীয়ের (first blood relative) অ্যাকাউন্ট হতে পারে
আত্মীয় যদি সরাসরি বাবা-মা না হন (যেমন: চাচা, মামা, দাদা), তাহলে স্পনসরশিপ অ্যাফিডেভিট এবং সম্পর্কের প্রমাণপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র বা relationship certificate) প্রয়োজন হবে।

🏦 ৭. ইনকাম সোর্স না থাকলেও কি নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা যাবে?

হ্যাঁ, নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা যাবে। তবে আপনি যদি আয় না করে থাকেন, তাহলে দেখাতে হবে কে আপনাকে টাকা দিয়েছে (উদাহরণ: পিতা-মাতা)।
যদি টাকা কোথা থেকে এসেছে সেটা পরিষ্কার করা যায়, তাহলে কোনো সমস্যা হয় না।

📝 ৮. অ্যাফিডেভিট কাদের জন্য প্রয়োজন?

যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপনার না হয়ে পিতা-মাতা বা আত্মীয়ের হয়, তাহলে স্পনসরশিপ অ্যাফিডেভিট লাগবে।
এটি একটি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত চিঠি, যেখানে স্পনসর ঘোষণা দেয় যে সে আপনার যাবতীয় খরচ বহন করবে।
এছাড়াও, সম্পর্ক প্রমাণে জন্মসনদ বা পারিবারিক সনদের কপি দিতে হয়।

❌ ৯. ফেক ডকুমেন্ট ব্যবহার করলে কী হয়?

ভিসা অফিসাররা আপনার জমাকৃত ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সলভেন্সি সার্টিফিকেট যাচাই করে থাকেন।
যদি জাল কাগজ বা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়:
ভিসা বাতিল হতে পারে
পাসপোর্টে ‘warning seal’ দেওয়া হতে পারে
ভবিষ্যতে কোনো দেশে ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে
তাই সতর্ক থাকুন এবং সত্য ও বৈধ কাগজ ব্যবহার করুন।

📉 ১০. টাকা কখন উত্তোলন করা যাবে?

ভিসা পাওয়ার আগে টাকা ব্যাংকে রাখাই ভালো।
আবেদন জমা দেওয়ার সময় থেকে শুরু করে ভিসা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত টাকা না তোলাই নিরাপদ।
কারণ, ভিসা অফিসার চাইলে আপনার অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ অবস্থা দেখতে চাইতে পারেন।

❗ ১১. ব্যাংক স্টেটমেন্টের কারণে ভিসা রিজেকশনের সম্ভাবনা

নিম্নোক্ত কারণে ভিসা রিজেক্ট হতে পারে:
ব্যাংক স্টেটমেন্টে টাকা কম
হঠাৎ করে বড় অংকের জমা
ফেক ডকুমেন্ট বা জাল সলভেন্সি
আর্থিক অক্ষমতা সন্দেহ হলে
তাই প্রামাণ্য ও স্বচ্ছ আর্থিক ডকুমেন্ট প্রদান করুন।

⚖️ ১২. পার্শিয়াল স্কলারশিপ বা আবাসন সুবিধা না থাকলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট

আংশিক স্কলারশিপে পড়লে বা যদি আবাসন নিজে বহন করতে হয়, তাহলে বাকি খরচের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
যে অংশে আপনি নিজে খরচ করবেন, সে অংশের অর্থের প্রমাণ হিসেবে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
📝 ভবিষ্যতে যেসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত গাইড আসছে:
🔹 নামের অমিল ও বানান সমস্যার সমাধান – পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ও ভিসা ফর্মে নামের বানান বা বিন্যাসে মিল না থাকলে কীভাবে ঠিক করবেন।
🔹 ভিসা ফর্মে তথ্যভুল এড়ানোর কৌশল – আবেদন ফর্ম পূরণের সময় যে সাধারণ ভুলগুলো হয় এবং সেগুলো কীভাবে ঠিকভাবে পূরণ করলে ভিসা ঝুঁকি কমে।
🔹 ব্যাংক লেটার বনাম ব্যাংক স্টেটমেন্ট – কখন কোনটি লাগবে, কোনটির গুরুত্ব বেশি, এবং দুটির মধ্যে পার্থক্য কী।
✍️ আরও জানতে অথবা হেল্প লাগলে যোগাযোগ করুন:
📞 WhatsApp/Phone: +8801804-569498
📍 Office: Regency Haque Villa, 5th Floor, B-4, Japan School Road, Shajadpur, Gulshan, Dhaka (People’s Care Hospital-এর পাশে)
 Google Maps: Click Here

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top